কাহালু( বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
শনিবার নবান্ন উৎসব উদযাপন উপলক্ষ্যে বগুড়ার কাহালুতে বসেছে বৃহৎ মাছের মেলা। মাছের মেলায় ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষা করা গেছে। ঋতু বৈচিত্র্যের হেমন্ত কাল আসলেই কৃষকের নতুন ধান ঘরে তোলার মধ্য দিয়ে শরু হয় আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য এই নবান্ন উৎসব।
হিন্দু ধর্মালম্বীদের মতে ১লা অগ্রহায়ণ এই নবান্ন উৎসব দেশের বিভিন্ন স্থানে গত বৃহস্পতিবার উদযাপিত হলেও শনিবার বগুড়ার কাহালুতে সাজ সাজ রব ও আনন্দ ঘন পরিবেশে এ নবান্ন উৎসব উদযাপিত হয়।
নবান্ন উৎসবকে ঘিরে কাহালু পৌর হাট বাজার, সারাই বাজার ও দুর্গাপুর বাজার সহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসে বৃহৎ মাছের মেলা। এসব মাছের মেলায় মাছ কিনতে সৌখিন ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
কাহালু বাজারের পাইকারি মৎস্য ব্যবসায়ী মোঃ ফজলার রহমান জানান, নবান্ন উৎসব উদযাপন উপলক্ষ্যে এবার কাহালু বাজারে দেড়শ মণের বেশি মাছ বিক্রির জন্য আনা হয়েছে। তবে গত বারের চেয়ে এবার বাজারে মাছ কম এসেছে।
মাছ ব্যবসায়ী আজিজুল হক ১৫ কেজি ওজেনের ১টি বাগাইড় মাছ এনেছেন সিরাজগন্জ থেকে। এই বাগাইড় মাছ ১১শ টাকা কেজি দরে ১৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আরেক মাছ ব্যবসায়ী হালিম ১০ কেজি ওজনের ব্লাক কাপ মাছ এনেছেন যা ৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন।
এছাড়া ১২ কেজি ব্রিগেড মাছ ৫শ থেকে ৬শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারে মাছ কিনতে আসা সৌখিন ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,বছরের অন্য সময় মাছ কিনলেও নবান্ন উৎসবে বড় মাছ কেনা অনেকটা পরিবারের রেওয়াজে পরিনত হওয়ায় তারা মাছ কিনতে এসেছে। এছাড়া পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের সন্তোষ্ট করতে বড় মাছ কিনার রীতি রেওয়াজ অনেক পুরণো। সেই পুরণো রীতিকে ধরে রাখতে নতুন জামাই ও সৌখিন ক্রেতাগন নবান্ন উৎসবের দিনে বাজার থেকে বড় মাছ কিনে থাকেন। নবান্ন উৎসবকে ঘিরে ঘরে ঘরে নতুন চালের পিঠা, পুলি, ক্ষীর, পায়েস আর ফিরনি দিয়ে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ধুম পড়ে যায়। গ্রাম বাংলায় চলে নানা আয়োজন।
এই নবান্ন উৎসব উদযাপন মুসলিম সমাজে খুব একটা পালন করা না হলেও আদিকাল থেকে হিন্দু সমাজের মানুষ তাদের পূর্ব পুরুষদের অতীত ঐতিহ্য আর রীতিকে ধরে রাখতে এটি যুগ যুগ ধরে পালন করে আসছে। তাই নবান্ন উৎসব উদযাপনে হিন্দু সম্প্রদায় নানা আয়োজন করে থাকে। সূর্য উদিত হবার সাথে সাথে হিন্দু মহিলারা ঊলু ধ্বনীর মাধ্যমে জমি থেকে এক মুঠো নতুন ধানের শীষ কলার পাতায় নিয়ে বাড়ির উদ্দ্যেশে রওনা দিয়ে নবান্ন উৎসবের শুভ সূচনা করে। এরপর শুরু হয় তাদের পরবর্তী নানা আয়োজন। দাম বেশি হলেও বাজারে শীতের নতুন সবজি কিনতে ছুটছেন হিন্দু ধর্মালম্বীরা। বিশেষ করে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ টাকা কেজি দরে। অতিথিদের মিষ্ঠি মুখ করতে পিছিয়ে নেই মিষ্ঠি ও দধির দোকান। সুস্বাদু গুড়ের জিলাপি সহ হরেক রকমের মিষ্ঠির পসরা সাজিয়ে মিষ্ঠি বিক্রি করছে দোকানিরা। নবান্ন উৎসবকে ঘিরে এলাকায় সাজ সাজ রব ও আনন্দ ঘন পরিবেশ বিরাজ করছে।